একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখব প্রতিটি ঘরে সব একা একা মানুষ? একটা লাগোয়া স্নানের ঘরে, একটা এলোমেলো পাকা পাকের ঘর আর নীল রঙের নির্জনতা, এই হবে একমাত্র এইভাবে বেঁচে থাকা! মিশুক মানুষটাও খুব একা হয়ে যাবে একদিন ঠকে যাওয়ার ভয়ে!
একদিন দেখা যাবে পাড়া মহল্লায়, চায়ের দোকানে বড় বড় রেস্তোরাঁয় মানুষ গোপনে, উঁকি দিয়ে দেখবে আর কেউ খাবারের টেবিলে আছে কিনা? একলা নির্জন একটা টেবিল পেলে ছোঁ মেরে সে সেটা দখল করে নেবে।
মানুষ সত্যি একদিন খুব একা হয়ে যাবে। বনের হিংস্র বাঘ আর সিংহের মত মানুষ মানুষকে ভয় পাবে, এড়িয়ে চলবে। কিছু মানুষের মাথার উপর গোলগোল লাল বাতির হুইসেল থাকবে, তারা সব সময় যন্ত্রণা বাজাবে।
তাদের দেখলে মানুষ দৌড়ে কাফনের দোকানে ঢুকে পরবে। তাদের দেখতে মৃত্যু মৃত্যু লাগবে, আগরের দোঁয়া ছড়াবে, পাপের সমাপ্তি করবে।
আখেরী যুগ বলে মানুষ আসলেই খুব একা হয়ে যাবে সেদিন। একদিন এমন হবে কেউ কারও মুখ দেখতে চাইবে না।কারও ঘরে নতুন সন্তান আসবে না। কারও বারান্দা জুড়ে শিশুর কাঁথা শুকানো হবে না। মানুষ, মানুষ জন্ম না দিয়ে কুকুর বিড়ালের মুখে মা বাবা ডাক শুনতে চাইবে। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে বক্তব্য দিবে। মানুষের চেয়ে জানোয়ার অনেক আপন, তারা কখনও ঠকাবে না, কষ্ট দিবে না, ছেড়ে যাবে না, মিথ্যা বলবে না।
মানুষ একদিন আর পার্কে যাবে না! চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ শুধু জন্তু জানোয়ার দেখবে আর নিশ্চিত মনে ভাববে মানুষের চেয়ে এরা ভালো!
কেউবা কুকুরের মুখে চুমু দিবে, কেউবা বিড়ালের পিঠে হাত বুলাবে, কেউ বা হাতির পিঠে ছড়ে রাজা সুখ নিবে। আবার কেউ বা জিরাফের পিঠে উড়োজাহাজে চড়ার গল্প মজবে।
বক্সির হাটে একদিন আর ডালাকুলো, মোম,মেহেদী আর ঝাঁঝর বিক্রি হবে না। কোনও ঘরে আর হলুদ বাটো মেহেদী বাটো এইসব লোকও গান গাইবে না। একসময়ের বিচ্ছিরী ভীড় থাকা কমিউনিটি সেন্টারে আর বিয়ে বাতি জ্বলবে না! মানুষ আর কোনো দিন কারো জীবনসঙ্গী হইতে চাইবে না!
পৃথিবী সত্যি একদিন মানব শূন্য হয়ে যাবে। ফার্মেসিতে আর ভিটামিন বিক্রি হবে না। হবে না কোনো শক্তিবর্ধক ওষুধ কেনাবেচা মানুষ সব লতাপাতা খেয়ে শুকরিয়ার ঢেঁকুর তুলবে! আর আমিও বসে বসে ভাববো আমার লেখার নির্জনতা কবিতার পমক্তিগুলো মানুষ পেলাম না বলে আজ অবধি ছাপানো হল না।
অক্ষরগুলো পুরোনো কাঠের আলমারিতে কতটা অসহায় হয়ে অপেক্ষা করছে অনাদিকাল! পরে ভাবলাম-থাক, আমিও না হয় আজ মানব শূন্য এই পৃথিবীর বুকে নিজের অসমাপ্ত ব্যথার গুনগান গাইলাম!
(আবেগী কথা)
এমদাদ হোসেন ফারাভি