প্রত্যেক বাবা ও মায়ের’ই ইচ্ছে থাকে যে, তাদের একটা সন্তান আসুক পুত্র কিংবা কন্যা রূপে। তাকে ভালো ভাবে মানুষ গড়ে, নিজেদের ও বংশের সুনাম যাতে বজায় রাখে; তারই জন্য চেষ্টা করে। বাবা ও মা নিজেদের সমস্ত টুকো দিয়েই, সন্তানকে মানুষ করার চেষ্টা করে চলে যায়। ভবিষ্যতে যে নিজেদের এর কারণে, কষ্টের সম্মুখীন হতেও পারে তাঁর চিন্তা ভুলে থাকে।
সন্তানদের শিশুকাল অর্থাৎ যতদিন তারা অবুঝ থাকে, ততদিন বাবা ও মায়ের কথায় চলাফেরা করে। এরপর ধীরে ধীরে যখন আরও বড় হয়ে উঠে সবকিছু বোঝে অর্থাৎ জ্ঞানের পরিসীমা বেড়ে যায়; তখন তারা আর বাবা মায়ের কথা শোনে না। নিজেরা যেটা ভালো বুঝবে, সেটাই করবে। মা ও বাবাকে পর্যন্ত একবারও জিজ্ঞেস করবে না। অল্প বয়স তাই ভালো ও মন্দ কি হতে পারে? না বুঝেই তারা যেকোনও ডিসিশন নিতে প্রস্তুত থাকে।
আমার মনে হয় না, কোনো মা ও বাবা’ই সন্তানের কোনো সময় খারাপ কিছু চায়। সন্তান যাতে ভালো থাকে ও সুখের মুখটা যাতে দেখতে পারে, এটাই সব সময় বাবা ও মায়ের স্বপ্ন থাকে। আজকের যুগে দেখা যাচ্ছে যে, সন্তানরা একটু বড় হলেই বাবা ও মায়ের কথা আর ভাবে না কিংবা তাদের প্রতি ততটা টান আর থাকে না। কেন জানি মা ও বাবার প্রতি সম্পর্কের একটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে।
এও দেখা যাচ্ছে যে সন্তান কিছু বায়না করলে, তা সঙ্গে সঙ্গে না দিলেই সন্তান মুখ ভাড়ী করে থাকে। এর জন্য এতটাই অভিমানী ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে যায় যে, তারা অসম্ভব কিছু করতেও পরোয়া করে না। আজকের সমাজে দেখছি সামান্য কিছু কারণে সন্তান বাবা ও মাকে মারতেও পিছপা হয় না, কিংবা নিজে আত্মহত্যা করতেও একবার ভেবে দেখে না।
নিজের কিংবা অন্যের মৃত্যু কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে; তা কিন্তু কোনো মতেই মানা যায় না। এতে যারা বেঁচে থাকে তাদের বাকি জীবন কষ্টের মুখে পড়ে দিন কাটাতে হয়। মেরে ফেলা কিংবা মরে যাওয়া খুবই সহজ কাজ, আর সেই কাজটা যে কেউই করতে পারে এই জগতে, আর এতে মহান হওয়া যায় না। প্রতিদিন জীবন যুদ্ধের সামনা করে বেঁচে থাকার নামই জীবন; আর এটা এত সহজ কাজ নয়। যারা করতে পারে তারা সত্যিই মহান।
তাই এখনকার সন্তানদের আমার একটাই কথা বলার আছে যে, আগে থেকে খুব ভালো করে ভেবে দেখেই; তবে চরম কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে। তার এই সিদ্ধান্তের জন্য কোনো ক্ষতি কিংবা কারো কষ্টের নদীতে ভাসতে হবে না তো? শুধুমাত্র নিজের সুখ, শান্তি ও ভালোর জন্য এমন কোনো কাজে কোনো মহানতা নেই। অন্যের সুখ, শান্তি ও ভালোর জন্য যখন আমরা জীবনযুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকব, তখন সেটাই হবে মহান কাজ।
রতন বসাক (শ্যামনগর)