এই সময়ের উল্লেখযোগ্য দুটি ভিন্ন স্বরের পত্রিকা
১
যুব প্রত্যাশা

ঈদ সংখ্যা ‘যুব প্রত্যাশা’(২০২৩) অসাধারণ প্রচ্ছদ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।ঈদ উপলক্ষে যতগুলো পত্রিকা বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয় তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা হল ‘যুব প্রত্যাশা’। ঝরঝরে সুন্দর মার্জিত সম্পাদনা এবং মননশীল রচনা সম্ভারে সমৃদ্ধ এর প্রতিটি পৃষ্ঠা। ব্যতিক্রমী বেশকিছু নামকরা সাহিত্যিক এই পত্রিকায় গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছেন। ইতিহাস, দর্শন, লোকসাহিত্য, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সমাজভাবনা নিয়ে লেখাগুলি খুবই মূল্যবান। যেমন খাজিম আহমেদের ‘মুঘল আমলে গ্রন্থাগার’ রচনাটি কোনো ইতিহাস গবেষকেরও ঈর্ষার কারণ হতে পারে। তেমনি মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহুর
‘রাসূল সা. এর ঈদ উদযাপন’ আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। রমজান ও ঈদের সেকাল-একাল নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ নুরুদ্দীন। সংখ্যালঘুর মৌলিক অধিকার নিয়ে লিখেছেন মিলন দত্ত। হিন্দু জাতিভিত্তিক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ইতিহাস সন্ধান করেছেন আমিনুল ইসলাম। হিন্দু-মুসলিম সমস্যা ও ঈদ উৎসব নিয়ে লিখেছেন সুমন সেনগুপ্ত। আরও উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ লেখক তালিকায় যাঁদের নাম করা যায় তাঁরা হলেন: মইনুল হাসান, ফিরাস আল-খাতিব,শাহনওয়াজ আলি রায়হান, ডা. নূর মহম্মদ, মুহাম্মদ মিযানুর রহমান, আব্দুর রউফ মোল্লা, সফিকুল ইসলাম মণ্ডল, কাজী খায়রুল আনাম, সুরঞ্জন মিদ্দে,সানাউল খান, নাসির ওয়াদেন, রাকিবুল ইসলাম,মুদাসসির নিয়াজ, ফারুক আব্দুল্লাহ প্রমুখ। অসাধারণ কয়েকটি গল্প লিখেছেন : অমর মিত্র, হেদায়েতুল্লাহ, মুসা আলি, সৌরভ হোসেন, রাশিদুল বিশ্বাস, আয়েশা খাতুন। ফিলিস্তিনের কবি হালা আলিয়ানের কবিতা অনুবাদ করেছেন আদনান সৈয়দ। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য তিনজন সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, এমদাদুল হক নূর ও ফারুক আহমেদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অনেক অজানা বিষয় উঠে এসেছে। সমাজ রাজনীতি ইতিহাস এবং সাহিত্য নিয়ে তাঁরা অনেক তথ্য দিয়েছেন। গুচ্ছ কবিতা এবং এই সময়ের বহু উল্লেখযোগ্য কবির কবিতা এই সংখ্যার মূল্যবান সংযোজন। যোগাযোগ: গোলাম রাশিদ, ১৪ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট(দ্বিতল), কলকাতা-১৬,দাম ৫০ টাকা। কথা ৮০০১০০৭৪৯৭।
২
নতুন মুখ

সাগরদ্বীপ থেকে প্রকাশিত ছোটদের ষাণ্মাসিক সাহিত্য ‘নতুন মুখ’(বৈশাখ ১৪৩০) নববর্ষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদক আশিসকুমার ভূঁইয়া বহু যত্ন নিয়ে পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। প্রতিটি লেখার সঙ্গে লেখক এর ছবি ও পরিচিতি পরিবেশন এক অনন্য সংযোজন। তাই ‘নতুন মুখ’ শুধু লেখাই ছাপে না, লেখককেও চিনিয়ে দেয়। পাঠকের চিঠিপত্রসহ শিশু-কিশোর উপযোগী বহু লেখাই মনকে আকৃষ্ট করে। গ্রামবাংলার নিজস্ব জীবনচিত্রের সঙ্গে সাহিত্যভাবনার গভীর সংযোগরেখা নির্ণয় করা সম্ভব এই পত্রিকাটি পাঠ করে। সোশ্যাল মিডিয়া এখনো নিজস্ব সংস্কৃতি কেড়ে নিতে পারেনি তা এই পত্রিকাটি দেখলে বোঝা যায়। রথ, চড়কমেলা, নববর্ষ, পঁচিশে বৈশাখ, রাখি উৎসব, বৃক্ষরোপণ, ধান-ঘাস-মাটি-কৃষক-শ্রমিক এসব নিয়েই বা কত ভাবনা কবি-লেখকদের লেখায় উঠে এসেছে। সুতরাং এই পত্রিকাটি সাধারণ মানুষের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ঋতানু দে লিখেছেন “ক্লান্ত আমি ঘরে বাইরে/ মনেতে জমে ব্যথা/ বলতে দেখিনি আজও কাউকে/ মানুষ হবার কথা।” এই লেখার কাছে সমগ্র দেশের মানুষের মাথা নত করা উচিত। শুধু বাংলা নয় , ইংরেজি ভাষাতেও বেশ কয়েকটি লেখা রয়েছে। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি লেখকদের পাশে কচিকাঁচারাও লিখেছেন দেখে মন ভরে যায়। সাহেরী বিশ্বাস,দীপান্বিতা মণ্ডল, অঙ্কলিপা খাটুয়া, সুদীপ্ত কারক প্রমুখ বহু কচিকাঁচার সঙ্গে আছেন বিদগ্ধ নামকরা লেখকরাও।
যোগাযোগ আশিসকুমার ভূঁইয়া, শীলপাড়া, ডাকঘর মুড়িগঙ্গা,দক্ষিণ২৪পরগনা-৭৪৩৩৭৩, কথা ৯৫৬৪০৩০৫১৫। মূল্য ৩৫ টাকা।

তৈমুর খান

