ঐতিহাসিক সেমাফোর টাওয়ার স্মৃতি চিহ্নিত জায়গাটা আমার প্রথম দিন দেখার পরে খুব ভালো লেগে ছিল। ছবি তুলে রেখে ছিলাম সেই ২০০৬ সালের ফাল্গুন মাসে। ছোট্ট পাহাড়টির নাম গৈহিরার পাহাড় যেহেতু পাশে একটা ছোট গ্রামের নাম গৈহিরা।
আর সাঁতালডিহি যাওয়ার এই মোড়ের নাম পাহাড়ি গোড়া পুরুলিয়া জেলার ছোট পাহাড় বা টিলা গুলোকে বলে পাহাড়ি। এভাবে একাধিক পাহাড়ি যুক্ত স্থানের নাম হয়েছে পাঁচ পাহাড়ি, ধ পাহাড়্যা , চোর পাহাড়ি, আরো কত কি ? আর গোড়া বলতে সামনে থাকার জন্য বোঝায়।
আসলে এটা একটা চার মাথার মোড়। রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া থেকে বাস গুলো সাঁওতালডি যাওয়ার পথে এখানে দাঁড়ায়। পাশাপাশি গ্রামের গৈহিরা, সিঁদুরপুর, ইঁদটাঁইড় দেউলির মানুষ বাসে চাপে। আগে এখানে বেশি কিছু দোকানপাট ছিল না। বট তলায় কয়েকটি চা পৌকড়ির দোকান ছাড়া। কয়েকটি কয়লা পোড়ানো চুল্লি পরে অনেক ভিড় জমেছে।
গৈহিরার পাহাড়, সিঁদুর পুর গ্রাম আর পাশে ছোট্ট নদী ক্ষীন জলস্রোতের হাড়াই। হাড়াই নদী এগিয়ে গিয়ে গুয়াই নদীর সাথে মিশেছে।
পাহাড়ি গোড়ায় ক্রাশার মেশিন বসলে আরো মানুষের যাতায়াত বাড়ে, দোকান পাট বাড়ে, রুজি রোজগার পথ বাড়ে। পাহাড়ি গোড়ার গৈহিরার পাহাড়িতে পাথর কাটতে শুরু করলে ধীরে ধীরে পাথর খাদানে তৈরি হয়। চার দিক থেকে পাথর কাটতে কাটতে পাহাড়ির কলেবর খাটো হয়ে এসেছে।
জায়গাটির নাম ” পাহাড়ি গোড়া ” । এক প্রাচীন ” সেমাফোর টাওয়ার ” অবস্থান করায় আজিও এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করছে। এরকম সেমাফোর টাওয়ার জয়চণ্ডী পাহাড়, বোদমার পাহাড়ে অহল্যাবাই রোডের পাশে পাশে রয়েছে।
এখন মোড়ে স্থানীয় একটা বাজার গড়ে ওঠেছে। পোড়া কয়লা তৈরির কারখানা, ক্রাসার মেশিন, খাবারের দোকান, ওয়েল্ডিং কারখানা, তেল পাম্প রয়েছে। মোড়ে সমস্ত বাস রঘুনাথপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া যাওয়ার স্টপেজ রয়েছে।
সোজা রাস্তাটি অহল্যাবাই রোড ততগ্রাম দিয়ে চন্দন কিয়ারি হয়ে চলে গেছে। অনতি দূরে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় আছে। কিছু দূরে হাড়াই – গুয়াই নদী এক সঙ্গে বর্ষায় বৃষ্টির জল ভরে বয়ে যায়।
” পাহাড় গোড়া ” নামের কোন পরিবর্তন অদূর ভবিষ্যতে না হলেও পাহাড়টি আর হয়তো বরাবর থাকবে না। হয়তো ” পাহাড় গোড়ার খাদে ” পরিনত হোতে চলেছে। পাহাড়ের চারপাশ থেকে পাথর কেটে কেটে স্থানান্তর হয়েছে। পাহাড়ের এখন মাঝ অংশটুকু অবশিষ্ট রয়েছে। যেভাবে কাটাই চলছে আগামীতে তা তো হারিয়ে যাবেই ? কাকেও দোষ দিচ্ছি না, মানুষের পেট চালাতে একটা পাহাড় তো নিশ্চিহ্ন হতেই পারে ? পাহাড়ে রূপ দেখে তো দিন চলে না। হয়তো পরিবেশের আজ বিকৃত রূপ হয়েছে পেটের তাগিদে ।
এখানে একবার নব কুঞ্জ অনুষ্ঠানে ছেলেবেলায় পাড়ার লোকের সাথে গদীবেড়ো গ্রামের থেকে রাত্রে ট্রাকে চেপে হরিনাম অনুষ্ঠানে এসে ছিলাম। পরে পরে F -188 no আমার জীবনের গাঁটছড়া বেঁধে দেয়।
ভবিষ্যত প্রজন্ম ফিসফিস করে একদিন হয়তো বলবে ” পাহাড়ি গোড়ায় ” পাহাড় তো নেই ? নাম বলে ” পাহাড়ি গোড়া “। তখন শুধুই গল্প রবে।
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল