মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম (সোহেল)

বাংলাদেশের গণহত্যা দিবস (Bangladesh Genocide Day)

বাংলাদেশের গণহত্যা দিবস (Bangladesh Genocide Day)
————————————————————————————————

বিভীষিকাময় ভয়াল ২৫শে মার্চ । রক্তাক্ত কালোরাত! জাতীয় গণহত্যা দিবস । বাঙালি জাতির জীবনে এক মর্মান্তিক ও কলঙ্কময় অধ্যায় ৷ মানব ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এবং বৃহত্তম এক গণহত্যার সূচনা হয়েছিল এ রাতেই ৷ যেটি পরিচালনা করেছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল ইয়াহিয়া খান । বাংলাদেশের মানুষ এ কালোরাতে নিহত শহীদদের স্মরণ করে রাতে (১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত) সারাদেশে সমস্ত আলো নিভিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ৷ এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচী ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘকাল যাবৎ আন্দোলন-লড়াই করে গেছেন ৷ সে এক দীর্ঘ ইতিহাস ৷ তারই ধারাবাহিকতায় নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার পরও পাকিস্তানি সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে টালবাহানা শুরু করেন এবং এক জটিল রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় ৷ সে পরিস্থিতি নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে তথাপি বাঙালির উপর সামরিক আক্রমণ (Operation) শুরু করার নির্দেশ দেন । সে মোতাবেক, সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান আক্রমণ চালানোর জন্য মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজাকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন । এ অভিযানের মূল লক্ষ্যই ছিল স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র নেতৃবৃন্দ, বাঙালি বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও স্বাধীনতাকামী সচেতন নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করে আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের কণ্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া ৷ তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুখ্যাত Operation Search Light নামে পূ্র্ব পাকিস্তানে পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহতম গণহত্যা সংঘটিত করে । এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম বর্বর, নিষ্ঠুরতম ও কলংকজনক গণহত্যার একটি রাত ৷ এক বিরল জঘন্যতম দৃষ্টান্ত । সে কালোরাতে বাংলার মাটিতে পকিস্তানি সেনাবাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা এক নৃশংস গণহত্যা ৷ তারা জ্বালিয়ে দেয় ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ইত্যাদি । লুটতরাজ ও ধ্বংস করে বিভিন্ন স্থাপনা । পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পাক হানাদার বাহিনী সে রাতে ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান নিয়ে নির্মম হত্যাকান্ড চালিয়ে প্রায় ৯০ হাজার নিরস্ত্র-নিরহ ঘুমন্ত বাঙালিকে হত্যা করে ৷ পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সেনাবাহিনীর প্রতি Operation Search Light সফল করতে পূর্ব পাকিস্তানে একযোগে হামলা পরিচালনা করার নির্দেশ ছিল ৷ ০২টি কমান্ডের অধীন ভাগ করা হয় পূর্ব পাকিস্তানকে ৷ রাও ফরমান আলীর অধীন ছিল ঢাকা শহর Operation পরিচালনা করার দায়িত্ব ৷ তিনি ব্রিগেডিয়ার জেহানজেব আরবাব এবং তার ৫৭ পদাতিক ডিভিশনকে ঢাকায় গণহত্যা পরিচলনা করার দায়িত্ব দেন ৷ অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে হত্যাযজ্ঞের দায়িত্বভার ছিল মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার উপর ৷ পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ রাও ফরমান আলীই পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৷ তিনিই শান্তি কমিটি ও আলবদর বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ৷ পাবিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি বহর ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্রাকভর্তি সৈন্য নিয়ে রাতের অন্ধকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ইকবাল হল ও জগন্নাথ হল ছিল প্রধান লক্ষ্যস্থল), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রীদের ছাত্রাবাস রোকেয়া হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রে অবস্থিত কালী মন্দির, Hotel Intercontinental (বর্তমানে রূপসী বাংলা), পুরান ঢাকার রাজারবাগ Police Lines, পিলখানায় অবস্থিত East Pakistan Rifles এর সদর দপ্তর, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সাপ্তাহিক পিপল পত্রিকা কার্যালয়সহ ঢাকার নীলক্ষেত, বাংলামোটর, চামেলীবাগ বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকার বাইরে রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর সারদা পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমীসহ বিভিন্ন জায়গায় নারকীয় তাণ্ডব আর ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় ৷ জগন্নাথ হলে চলে সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ৷ আরও কিছু বাহিনী আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে হত্যা বা ধরপাকড় করতে গেলে অধিকাংশই নেতাই পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা পান । বৃদ্ধ, শিশু, নারী-পুরুষ, রিক্সাচালক, ছাত্র, শিক্ষক, বাগানের মালী, কর্মচারী, সাংবাদিক, পাহারাদার, পুলিশ, মধুর কেন্টিনের মালিক মধুসূধন এর পরিবারের সদস্যদেরসহ নিরীহ জনগনকে তারা নির্বিচারে হত্যা করে ৷ সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব, জগন্নাথ হলের প্রভোষ্ট পণ্ডিত জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ফজলুর রহমান, ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মুক্তাদির, গণিত বিভাগের অধ্যাপক আ র খান খাদিম, অধ্যাপক শরাফত আলীসহ অসংখ্য শিক্ষক-ছাত্রকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে সেখানেই গণকবর খুড়ে দ্রুত মাটি চাপা দেয়া হয় । পুরনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয় । অন্য একটি বহর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করার উদ্দেশে ধানমন্ডির ৩২নং সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে যায় এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ৷ সু-জলা, সু-ফলা, শস্য, মৎস্য, চির সবুজ, নদীমাতৃক, অপার সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যময় সোনার বাংলার মানুষের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দোতলায় একটি ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন । যে মহান নেতার একমাত্র বিলাসিতা ছিল বিখ্যাত পাইপে এক শীতল স্বাদযুক্ত প্রিয় সুগন্ধময় এরিনমোর তামাক (Erinmore Pipe Tobacco) দিয়ে ধূমপান করা এবং দার্জিলিং চা । গ্রেফতার করার পূর্ব মুহূর্তে ২৬শে মার্চ (আনুমানিক রাত ১২টা ২০ মিনিটে) প্রথম প্রহরে এক তার বার্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন “This may be my last message: from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.” ৷ সমগ্র বাঙালির রক্তে আর চেতনায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে প্রতিরোধের দুর্বার স্পৃহা ৷ স্বাধীনতার দীপ্ত আকাঙ্খা ৷ রুখে দাঁড়ায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করতে । শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ । বাংলার দামাল সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে প্রানপণ লড়াই করে যান ৷ উল্লেখ্য যে: ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস ৷ বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের দিন ৷ পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার দিন ৷ রক্তে লেখা গৌরবোজ্জ্বল দিন ৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করে প্রথমে রাখা হয় রাজধানীতে নির্মাণাধীন তৎকালীন National Assembly Building (বর্তমানে শের-এ-বাংলানগর) এ, সেখান থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টের আদমজী কলেজে এবং পরবর্তীতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় Flagstaff House এ । তিন দিন পর বন্দী অবস্থায় বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে এবং সেখানে তাকে আলাদাভাবে বন্দী করে রাখা হয় । মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে গোটা পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) হয়ে উঠেছিল বধ্যভূমি ।
১৩ই জুন ১৯৭১খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানি সাংবাদিক নেভিল অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস ঢাকা এবং কুমিল্লা ঘুরে নৃসংশতার ভয়াবহতা দেখে পালিয়ে গিয়ে লন্ডনের The Sunday Times পত্রিকায় এক প্রতিবেদন লিখেন ৷ পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষ পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সরব হয়ে উঠে এবং পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে জনমত তৈরি হয় । এ গণহত্যা বন্ধে পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত পপ সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, বেজ গিটার বাদক George Harrison এবং ভারতীয় সেতার বাদক পন্ডিত রবি শংকর পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সচেতনতা, তহবিল সংগ্রহ ও ত্রাণ প্রচেষ্টা বাড়াতে স্বাধীনতা যুদ্ধ-সম্পর্কিত পূর্ব পাকিস্তানে নৃশংসতার ফলে সাহায্যের উদ্দেশ্যে ”The Concert for Bangladesh” আয়োজন করেন । আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফরাসি দার্শনিক, ঔপন্যাসিক ও রাজনীতিক আঁদ্রে মালরো André Malraux পূর্ব পাকিস্তানের সমর্থনে ”আন্তর্জাতিক ব্রিগেড” গঠনের ঘোষণা দেন । এছাড়া প্যারিস, লন্ডন ও অন্যান্য শহরে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী জনগোষ্ঠীর মানবিক কণ্ঠ জেগে উঠে ।
তবে পাকিস্তানপন্থী এ দেশীয় কিছু কুলাঙ্গার বাঙালি বিশ্বাসঘাতক রাজাকার, দালাল, আল বদর ও আল শামস্ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাক-হানাদার বাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা করে ৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকার-দালাল-আলবদর-আলশামস্ বাহিনী ভয়ানকভাবে গনহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ৷ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগণ যুদ্ধের অনিবার্য পরাজয় বুঝতে পেরে বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে স্বাধীনতা লাভের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তাদের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে রাজাকার, দালাল, আল বদর ও আল শামস্ বাহিনীর সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে ৷ উল্লেখ্য যে, ১৪ই ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ । এটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি বেদনাদায়ক দিন! দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং ত্রিশ লক্ষ প্রাণের এক মহাসাগর রক্তের বিনিময়ে বীর বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে । ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড ‘মিত্র বাহিনী’র কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত “বিজয়” অর্জিত হয় ৷ মহান মুক্তিযুদ্ধে পরম বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয় ৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তা প্রদান করতে গিয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ৪৩৫৩ জন ভারতীয় সৈনিক পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে নিজেদের রক্ত দিয়ে জীবনকে উৎসর্গ করেন ৷ বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ৷ উল্লেখ্য যে: ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস এবং জাতীয় দিবস ৷ মহান মুক্তিযুদ্ধ বীর বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা ৷ বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ ইতিহাসে অগ্রগণ্য অর্জন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র ।যার স্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান এবং এটি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন । আত্মপ্রত্যয়ী বীর বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, সংবিধান এবং বিশ্বের বুকে গর্বিত পরিচয় । ইতিহাসের পাতায় রক্তলাল অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয় বাঙালির মুক্তির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস এবং আত্ম-পরিচয়ের ইতিহাস । বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক । বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে সোনার বাংলার কৃষক-শ্রমিক-কামার-কুমার-গরিব-দুঃখী-মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার সারা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য । কারণ, বাংলার আপামর মানুষকে তিনি ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন এবং তাদের ভালোবাসাই ছিল তার বড় শক্তি । তাই বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা । বাঙালির তীব্র আকাঙ্খার মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান ৩০ লক্ষ আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদের মহাআত্মদান, দুই লক্ষাধিক মা ও বোনের সম্ভ্রমহানি-ত্যাগ-তিতিক্ষা, কোটি বাঙালির মহৎ আত্মনিবেদন এবং সংগ্রামের গৌরবগাঁথা গণবীরত্বের অগ্নিময় ইতিহাস চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ৷
পাশাপাশি পাক-হানাদার বাহিনীর অভিযুক্ত ঐ সকল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী এবং এ দেশীয় নির্লজ্জ রাজাকার, দালাল, আল বদর ও আল শামস্ বাহিনীর অভিযুক্ত মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বাঙালি জাতি কোনোদিন ক্ষমা করবে না ৷ তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ঠাঁই নিয়ে চিরকাল ঘৃণিত, কলঙ্কিত এবং পরাজিত হয়ে থাকবে ৷
Guinness World Records এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এ গণহত্যা সম্পর্কে অন্যতম প্রধান পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলি (Rao Farman Ali) তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন, “Green Land of East Pakistan will be painted Red” অর্থাৎ, তিনি বাংলা’র সবুজ মাঠকে রক্তবর্ণ করে দিবেন ৷
* তথ্যসূত্র: আন্তর্জাল (The Internet) এবং উইকিপিডিয়া ৷

14203260_1মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম (সোহেল)074991005947569_7563210931724634639_n.jpg

মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম (সোহেল)

Leave a Reply