Screenshot 20230402 124351 PixelLab
Screenshot 20230402 124351 PixelLab

হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো

আমাদের ছেলেবেলায় বিশেষত ছেলেদের একটা অনবদ্য খেলা ছিল ” চাক গুডগুড়ি ” খেলা । স্কুল থেকে ফিরে বা ছুটির দুপুর থেকে বিকেল-সন্ধ্যা অবধি কেটেছে আমাদের এই চাক গুড়গুড়ি খেলায়। সকল বন্ধুদের হাতে থাকতো একটা করে লোহার চাক ও তারের দাণ্ডি।

ছেলেবেলায় বাড়িতে সবাই বড়দের কাছে আবদার করতাম কামার শালে চাক গুড়গুড়ি বানিয়ে দেওয়ার জন্য। তখনকার দিনে লোহার ভাঙ্গা বালতির হাতলের রড বা রড টুকরো একটা বা দুটো কামার বাড়িতে দিলে কিছু মজুরির বিনিময়ে চাক গুড়গুড়ি বানিয়ে দিত।

বিভিন্ন বন্ধুদের হাতে বিভিন্ন আকারের চাকগুড়গুড়ি নিয়ে রাস্তায় দৌড়ানো দেখতে বেশ লাগতো। অনেক সময় প্রতিযোগিতা হয়েছে, কে প্রথম হোতে পারে। এই চাকগুড়গুড়ি চালাতে চালাতে অনেকেই দূর দূরান্তের নূতন পথের পথিক হয়েছি।

চাক গুড়গুড়ি চালাতে প্রয়োজন হত শক্ত তারের তৈরি একটা দণ্ড বা দাণ্ডি। এই দাণ্ডির এক প্রান্তে মাথায় একটা বাঁশের বা মোটা ধুতরা কাঠির হাতল লাগিয়ে নিয়ে চালাতে হত আর অপর প্রান্ত ইউ আকৃতির বাঁকিয়ে দেওয়া থাকত কয়েক ইঞ্চি যাতে লোহার চাকা এমন ভাবে দুদিকে বাধা পেয়ে আটকে থাকে ও স্বচ্ছন্দে ঘুরতে পারে। এর থেকে একটা লোহা ঘর্ষনের বিশেষ শব্দ বেরিয়ে আসত। এক সুরের সেই শব্দ কানে শুনতে বেশ লাগতো।

আমরা দন্ডে বিশেষ কৌশলে চাকা লাগিয়ে ছুট লাগালে চাকা গড়িয়ে চলত সামনের দিকে। বিশেষ ভাবে হাত বাঁকিয়ে ডাইনে ও বাঁয়ে মোড় নিয়ে চালকের আনন্দ পেতাম। এই চাক গুড়ি চালানোটা সহজ ছিল না কয়েকদিন রপ্ত করতে সময় লাগতো।

অনেকের চাকা ছ্যাঁদা ছ্যাঁদা কোন যন্ত্রের বড় ওয়াশারের মতো হোত বলে মনে হয়।

বৈশাখ জৈষ্ঠ মাসের দিকে কাঁচা তালের শাঁস খেয়ে ফেলে দেওয়া তাল থেকেও তাল গাড়ি বানিয়ে চালিয়েছি। এই তাল গাড়ি তৈরি করতে মাথা কেটে শাঁস খাওয়া একই মাপের দুটো তাল জোগাড় করতে হোত। দুটো তালের মধ্যি খানে এক দেড় ফুটের মতো একটা সরু লাঠি একত্রে গুঁজে দিয়ে চাকা তৈরি করতে হোত। চালানোর জন্য লাগত খুটুল্যা বা ইউ আকারের একটা লম্বা দণ্ড বা ডাং।অনেকে আবার ডাংশের মাথায় আরেকটা তাল গুঁজে দিয়ে স্টিয়ারিং বানাতো।

পরে পরে লোহার চাক গুড়গুড়ি চালানোর চল কমে গিয়ে একটা এক ফুট মাপের মতো শক্ত কাঠি নিয়ে মেরে মেরে সাইকেল বা গাড়ির ফেলে দেওয়া টায়ার জোগাড় করে চালানো শুরু হল। এখনও কিছু কিছু ছেলে গ্রামের দিকে টায়ার চালিয়ে আনন্দ পায়।

এই দিনগুলো আজ আর ফিরে পাবো না। আর এখনকার ছেলেবেলায় এগুলোর প্রতি আগ্রহ দিন দিন হারিয়ে ফেলছে।

Screenshot 20230402 124351 PixelLab

বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল

Leave a Reply