#শিবের বিবাহ :: গাজনের অন্যতম আকর্ষণ
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””‘
প্রতিবেদনে : বারিদ বরন গুপ্ত
মন্তেশ্বর পূর্ব বর্ধমান, এপ্রিল ১৩, ২০২৩:: গাজন উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো শিব পার্বতীর বিবাহ অনুষ্ঠান। রাঢ তথা বঙ্গের বেশিরভাগ শিবের গাজনে হরগৌরির বিবাহ সম্পন্ন হয়।শুধু তাই নয় বিবাহ উপলক্ষে গ্ৰামের অনেক ভক্তও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। শিবের বিয়ে বলে কথা ! তাই মেয়েরা শাঙ্খ উলুধ্বনিতে আসর জমিয়ে তোলে। সাধারণ সাবেকি গ্রাম্য পরিবারের বিবাহ আসরের চিত্রপট যেন ফুটে ওঠে।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে সন্ন্যাসীরা প্রথমে শিবের নাম করে স্তুতি করতে থাকে, তারপর তারা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে এবং আরো নানা ধরনের খেলা দেখাতে থাকে, তাদের এই আঘাতে একজন মরার মত অবস্থা হয়, তাকে ছড়ি চাপা দিয়ে দেয়, নিজেরাই বারবার শিবের নাম উচ্চারণ করে তাকে আবার জাগিয়ে তোলে। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রায় অধিকাংশ গাজনে বুড়ো বুড়ির বিবাহ অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়! তার মধ্যে অন্যতম হলো কাটোয়ার কড়ুই গ্রামের বুড়ো বুড়ি অর্থাৎ হরগৌরির প্রতীকি বিবাহ অনুষ্ঠান! এখানে মিলন ও দ্বন্দ্বের নানান সংঘাতের কাহিনী জড়িয়ে আছে! তাই মুখোমুখি সাক্ষাৎ না থাকলেও প্রতিকী বিবাহ অনুষ্ঠান সন্ন্যাসীদের দ্বারা আজও সম্পন্ন হয়।
মনে করা হয় যে এরূপ অনুষ্ঠানের একমাত্র উদ্দেশ্যই হল শিবকে জাগানো, তাকে সাংসারিক জীবনে টেনে এনে সৃষ্টির প্রবাহ কে অক্ষুন্ন রাখা ! আরো মনে করা হয়, লোকসমাজ শিবের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য এরূপ অনুষ্ঠানে উদ্যোগী হয়েছিল, এরপর শুরু হয় দুই দলের সন্ন্যাসীদের ছল বলার পালা, এ যেন কবিগানের আসর এর মতো, একদল সুর করে শিবের গানের মাধ্যমে প্রশ্ন করে, অন্য দল ঠিক একইভাবে উত্তর দেয়, এইভাবে ছল পর্ব চলতে থাকে, শুধু সন্ন্যাসীরা নয়, অনেক সময় ভক্তরা এই ছল পর্বে অংশ নেয়, অতীতে স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজে বিয়ের আসরে এরূপ অনেক ঠাট্টা তামাশার মাধ্যমে বিভিন্ন ছড়া উপহার দেওয়া হতো! ছোটবেলায় অনেক বিবাহের আসরে এরকম মজার ছড়া সহ পুস্তিকা সংগ্রহ করেছি। বিবাহ আসর তখন মজা কৌতুকে জমে উঠতো! হয়তো হর গৌরির বিবাহের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই অতীতে বিভিন্ন বিবাহের আসরে এরূপ গীতপর্ব চলত! যেমন পৌরাণিক শিব পার্বতী স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সমাজে পার্বতী রূপে প্রবেশ করেছে,এক কথায় সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান একটা অন্য মাত্রা পায়, সর্বোপরি এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে, যেসব ক্রিয়া কর্ম চলে তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো শিবকে জাগানো তাঁর অনুগ্রহ বা কৃপা লাভ করা।
পুরান মতে মর্তে একসময় তারকাসুরের অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, জীবন যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠছিল, ধর্ম-কর্ম সব লাটে উঠেছিল, এককথায় জন জীবনে অভিশাপ নেমে আসে, এ থেকে নিস্তার পাওয়ার একমাত্র রাস্তা হল শিবের বিয়ে, দেব সমাজের কাছে বার্তা ছিল একমাত্র শিবের সন্তান এই তারকাসুরকে বধ করতে পারবে, এদিকে শিব ধানে মগ্ন, পার্বতী ও তার তপস্যা করে চলেছেন,রতি এবং কামদেব, প্রায় ব্যর্থই বলা যায়, শিব কে ধাম থেকে ভঙ্গ করার জন্য ভক্তরা সন্ন্যাসী হতে শুরু করে, যতদিন না বাবার ধ্যান ভঙ্গ হচ্ছে ততদিন তারা সন্ন্যাসী হয়ে থাকবেন, এরপর থেকেই নাকি সন্ন্যাসী হওয়ার সূত্রপাত বলে অনেকে মনে করেন।
সেই সূত্র ধরেই আজ বিভিন্ন শিব মন্দিরে বা ব্রাহ্মণদের বাড়িতে শিব পার্বতী বিবাহপর্ব চলে! বাড়িতে আয়োজন করা হয় শিবের বিয়ের অনুষ্ঠান। শিব মন্দিরের পুরোহিত নাপিত ইত্যাদির উপস্থিতিতে শিবের বিয়ে সম্পন্ন হয়, বেঁচে থাক বাংলার লোকসংস্কৃতি শিবের গাজন, এবং তাকে ঘিরে থাকা নানান ক্রিয়া-কলাপ।।
Barid Baran Gupta