You are currently viewing Article

Article

ভিজে ভাতের দিনে

বারিদ বরন গুপ্ত (পূর্ব বর্ধমান)

গরমে হাঁসফাঁস করছে দেশ! সবাই আকাশের দিকে মুখ চেয়ে আছে! হোক না একটা কালবৈশাখী, শরীর একটু শীতলতার পরশ তো পাবে! আজ ভর্তি দুপুর বেলায় গ্রামের আট চালায় বসে কোথায় কত তাপমাত্রা বাড়ছে, তার টাটিসটিক্যাল চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, এমন সময় মোড়ল পাড়ার রতন খুড়ো এই টাক ফাটা রোদে ধান ক্ষেত থেকে ফিরলেন! গোটা শরীর থেকে ঘাম বৃষ্টির জলের মতো টপটপ করে পড়ছে, এমন সময় পাশে বসা রবি খুড়ো দিবা তন্দ্রা ভেঙে উদাস
নয়নে চেয়ে বললো-
-‘খুড়ো তোমায় নমস্কার! তুমি পারো বটে! এই বয়সে —-‘

‘ভিজে ভাতের রসে তাপ নেয় শুষে!’ মাথায় পাগড়ি খুলে ঘাম মুছতে মুছতে সপাটে উত্তর দিল রতন খুড়ো,

এবার শুরু হল ভিজে ভাতের গল্প-‘শুধুমাত্র একটা লঙ্কা পোড়া আর আস্ত একটা কাঁচা পেঁয়াজে জামবাটি জামবাটি ভিজে ভাত উড়ে গেছে, তখনও গ্ৰীষ্মে এরকম তাপ ছুটতো, শুধু খেতে খামারে কাজ নয়, মাইলের ফর মাইল মানুষ হেটে চলে গেছে, কখনো বেলেরহাট বা জামালপুরের হাট আবার কখনো মেমারী নবদ্বীপ কাটোয়া! একটা ছেড়া চটিও জোটেনি, আসলে কি জানলি! তখন খাবারে কোন ভেজাল ছিল না! খেতের তাজা সবজি,পুকুরের মাছ, ঘরের গরুর দুধ, টিনের গুর,হাত ডোবাও আর খাও! আর ভিজে ভাতের আওয়াজ! তাপ কোথায় চলে গেছে?
সবাই হাঁ করে আশি ছুই ছুই এই বৃদ্ধের কথা শুনছে! পুরোটা না হলেও অধিকাংশই সত্য। এসব কথার অর্থ বুঝতে গেলে তৎকালীন গ্রামীন সমাজ ব্যবস্থার দিকে একটু দৃষ্টিপাত করা দরকার।

তখন গ্রামীণ সমাজ জীবন ছিল অনেকটা বদ্ধ প্রকৃতির! শুধু ব্রিটিশ প্রিয়েড-ই নয় স্বাধীনতার পরবর্তী দুই থেকে তিন দশক পর্যন্ত অধিকাংশ গ্রামে রাস্তাঘাট ঠিকমতো তৈরি হয়নি! অনেক গ্রামে প্রবেশ করার একমাত্র উপায় ছিল আলপথ! তাই কিছুটা জলপথ, বাকিটা সবই পায়ে হাঁটার উপর নির্ভরশীল ছিল! ফলে স্বাভাবিকভাবেই গ্রামে আধুনিকতার আলো তখনো পৌঁছাতে পারেনি! তাই তাদের চাহিদা ছিল স্বাভাবিকভাবে কম, আর পাবেই বা কোথায়? তাই সাদামাটা জীবনে রোদ আটকাতে হয়তো ভিজে ভাতকেই তারা মক্ষম দাওয়াই হিসেবে ব্যবহার করেছিল। রোদের সঙ্গে লড়াই করেছিল, মাঠে কাজও করেছিল!

তবে আমি ডঃ জীবনানন্দ ব্যানার্জির কাছেও পান্তা ভাতের অনেক গল্প শুনেছি! এক বয়স্ক ভদ্র মহিলা এসেছেন উনার কাছে, কারন প্রেসার আপডাউন করছে! ডাক্তার বাবু শুনে বললেন-‘এবার তাহলে পান্তাটা ছাড়ো? ভদ্রমহিলার সপাটে উত্তর-‘বাঁচতে পারব না!’ ডাক্তারবাবু তো হাসতে লাগলেন! আমি বললাম -‘ডাক্তারবাবু এটা একটা নেশা!’ ঠিকই বলেছিস, নেশাই বটে, আসলে ভিজে ভাতের মধ্যে ‌ অ্যালকোহল তৈরি হয়, যেটা নেশার মত! তাছাড়া ল্যাকটিক আসিড এবং অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয় যার জন্য হজম হয়ে যায়! তাছাড়া গরম ভাতের চেয়ে ভিজে ভাতে ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এবং আইরন অনেক বেশি থাকে! ভিজে ভাত একটু ঝিমুনি ভাব আনে, শরীরের অনেক ক্লান্তি দূর করে! তাপ প্রতিহত করে! একটানা অনেকক্ষণ কাজ করা যায়। ওই জন্যই দেখিসনা আদিবাসীরা সব হাড়িয়া খায়!’ ডাক্তার ব্যানার্জি ‌জানালেন!

হয়তো তাই! কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভিজে ভাত, অপরিচিত একটি খাদ্য উপাদান! পরিত্যক্ত!
কিন্তু একসময় এটা মানুষের কাছে পরম উপাদেয় ছিল! আমি সাতের -আটের দশকেও গ্রাম বাংলার অধিকাংশ বাড়িতে এই গ্রীষ্মকালে ভিজে ভাত খেতে দেখেছি! শুধু তাই নয় কাড়াকাড়ি লেগে যেতে!শুধু একটু আলু ভাতে, লঙ্কা পোড়া, পিঁয়াজ, বেসন গোলা, ছোলার ছাতু, এসব ছিল ভিজে ভাতের চাট!‌ বর্তমান প্রজন্মের কাছে সত্যিই কৌলিন্য হারিয়েছি! আসলে সমাজ সংস্কৃতি পরিবর্তন এর কারণ!!

**ভিজে ভাতের দিনে**
বাকী অংশ আগামীকাল

inbound3214383209776333643.png

Barid Baran Gupta

Leave a Reply