আজ মহানবমী, দেবী চামুণ্ডার গ্রাম পরিক্রমা, চারিদিকে তাই সাজ সাজ রব, দেবীকে বরণ করার জন্য গোটা জনপদ সেই ভোর থেকে তৈরি হচ্ছে। দেবীর আবাহনের জন্য তৈরি জনপদের নির্দিষ্ট রয় বা মন্দির গুলি ফুলমালা সহকারে সাজিয়ে তোলা হয়েছে, মন্তেশ্বর জনপদে অন্তত দুই শত রয় বা মন্দির রয়েছে দেবীর অধিষ্ঠানের জন্য ! সেই সকাল থেকেই রাজ পুরোহিত চক্রবর্তী ও মুখার্জিরা, বাজানদার এবং দেবীর বাহক কৈবর্তরা প্রস্তুত হয়েছেন দেবীকে গ্রাম পরিক্রমা করানোর জন্য! প্রায় সারা বছর দেবী মাইচ পাড়ার নির্দিষ্ট মন্দিরেই থাকেন, বৈশাখী তিথিতে অষ্টমী নবমী এবং দশমী এই তিন দিন তিনি গোটা গ্রামের ভক্তদের পূজা গ্রহণ এবং আশীর্বাদ করেন, তাই তার গ্রাম পরিক্রমা।কালকে অষ্টমী তিথিতে খাঁ পুকুরে হাজরা, বর্গক্ষেত্রীয় প্রভৃতি সম্প্রদায়ের সাথে স্নান পর্ব সেরে দেবী উত্থান মন্দিরে বর্ধমান রাজদের পূজা এবং বলি গ্রহণ করেন , তারপর আরো শতাধিক রয়ে ভক্তদের পূজা এবং বলি গ্রহণ করে , আশীর্বাদ করে ফিরে যান মাইচপাড়া মহাপূজা মন্দিরে, এখানে মহাপূজা এবং বলি গ্রহণ করার পর দেবী ফিরে যান অনতিদূরে ভোগ মন্দিরে, সেখানে ভোগ খেয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে, দেবী রওনা দেন শয়ন মন্দিরের উদ্দেশ্যে, কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথে দেবীকে বারে বারে থামতে হয়, সেখানেও যে তার ভক্তরা তাকে আরাধনা করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে, ফলে আরো বেশ কয়েকটা রয় ঘুরে দেবী রাত্রি বারোটার সময় চলে যান শয়ন মন্দিরে, সেখানে বর্ধমান মহারাজদের রাজ পন্ডিতের নির্দেশে রাজ পুরোহিতরা ভোগ আরতির এবং দেবীর শয়নের বন্দোবস্ত করেন!
অতীতে এক সময় মন্তেশ্বর জনপদ গড়ে উঠেছিল খড়ি নদীকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটা খন্ডাংশ নিয়ে, গড়ে উঠেছিল জনপদ, নদীকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্যের সূত্রে আগমন ঘটে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের , গড়ে ওঠে বাজার হাট, আজও উঁকি মারে হাটেরঘাট! যাই হোক রানিহাটি পরগনার এই জনপদটি উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে একটু আলোর মুখ দেখতে থাকে, গড়ে ওঠা থানা, শিক্ষা কেন্দ্র, ধীরে ধীরে যুক্ত হয় প্রশাসনিক কেন্দ্র, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়, জনপদের আয়তন ও ঘনত্ব বাড়তে থাকে, পরে এই পাঁচটি পাড়া নিয়ে গড়ে ওঠা কেন্দ্রীয় স্বয়ংসম্পূর্ণতায় এক সম্মিলিত রুপ আজকের মন্তেশ্বর! পরে এই নিয়ে একদিন বিস্তৃত আলোচনা করব!
যাই হোক ফিরে আসি দেবী চামুণ্ডায়! দেবী চামুন্ডা এই জনপদের এক অন্যান্য দেবী! এই জনপদের সভ্যতার সংস্কৃতি এবং সংযুক্তিতে সেই সপ্তদশ শতক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই! দেবী চামুন্ডাকে কেন্দ্র করে ই এই জনপদের সব সামাজিক ক্রিয়া-কলাপ গড়ে ওঠে! তাই আজ মহানবমীতে দেবী গোটা গ্রাম প্রদিক্ষণ করেন ভক্তদের পূজা এবং বলি গ্রহণ করবেন, তারপর সন্ধ্যায় দেবী তার নিজের আলয়ে ফিরে যাবেন!! নমস্কার:: বারিদ বরন গুপ্ত
#আজ মহানবমী দেবী চামুন্ডার গ্ৰাম পরিক্রমা#
Barid Baran Gupta