মানিক মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি
কলমে বারিদ বরন গুপ্ত
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যবিত্ত সামাজের একজন প্রতিনিধি ! বিংশ শতকের মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ অনেকটাই ধরা পড়েছে তার লেখনীতে ! মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ কে কেউ এত কাছ থেকে দেখেনি, এই মধ্যবিত্ত সমাজের সব চরিত্রগুলো যেন তো আর নখদর্পণে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যখন প্রচন্ড টানাপোড়েন, মানবিক মূল্যবোধ অক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, সেই চিএ ও নিপুন তুলিতে তুলে ধরেছেন তাঁর সব গল্প উপন্যাসে; পুতুল নাচের ইতিকথা বা পদ্মা নদীর মাঝির সমস্ত চরিত্র যেন তার চেনা, অতি পরিচিত। হাজার দুঃখ কষ্টের মধ্যেও গোপন আভিজাত্য কে ধরে রাখার একটা প্রচেষ্টা যে ছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা উপলব্ধি করেছিলেন, অনেকে মনে করেন হয়তো তিনি নিজেকে মিলিয়ে ফেলেছিলেন তার এই জীবনধারার সাথে, সারা জীবন দারিদ্র্যের একটা গোপন স্রোত সব সময় বয়ে গেছে তার জীবনে, তা সত্যে ও তার কলম কিন্তু থামেনি। লেখক সাহিত্যিকদের গোপন দারিদ্র্যের সাথে লড়াই ও দুর্গতির কথা উপলব্ধি করে এই মধ্যবিত্ত সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি সাবধান বাণী শুনিয়েছিলেন-” দু’মুঠো অন্নের ব্যবস্থা না করে কেউ যেন সাহিত্যচর্চা না করে!” একজন প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত লেখকের এই স্বীকারোক্তি মধ্যবিত্ত সমাজকে একটু ভাবাই বৈকি!
ফ্রয়েডীয় এবং কাল মার্কসের বস্তুবাদী দর্শনের উপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিল, শিল্পায়ন, নগরায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের জীবনের যে গতিশীল ধারা, তিনি সেই ধারাকে তার নিপুণ তুলিতে তুলে ধরেছেন, গল্প বা উপন্যাসে, তাঁর অযান্ত্রিক গল্পে দেখা যায় একটা যন্ত্র কিভাবে মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়ল তার নিখুঁত ছবি সবই হয়তো জীবনের প্রতিচ্ছবি বলা যায়। বর্তমান গবেষকদের ধারণা মানিক মধ্যবিত্ত বাঙালিকে শুধুই দিয়ে গেলেন বিনিময়ে পেলেন না কিছু।
Barid Baran Gupta