গল্প
পাপ করেছি
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ
অমল বাবু গ্রামের একজন অকপট স্বভাবের মানুষ। তিনি চাষাবাদ করেই সংসার চালাতেন। তার মাতা-পিতা বেশ কয়েক বছর পূর্বেই মারা গেছেন। বর্তমানে তার স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়ে এই তার সংসার। কৃষিকাজ করেই অমলবাবু ছেলে মেয়েকে বহু কষ্টে পড়াশোনা করাচ্ছেন। ছেলই বড় তার বয়স একুশ বছর, সে এখন বি এ বাংলা অনার্সে পড়ছে। মেয়ের বয়স উনিশ বছর, বর্তমানে সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পলিটেকনিক কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে।
অমল বাবু কোনরকমে সবকিছু সামলে সংসারটা চালাচ্ছেন। চাষের কাজে বেশি কিছু রোজগার করা যায় না, তা হলেও কিছু কিছু করে টাকা মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি জমিয়ে রাখেন। অমল বাবুর স্ত্রী একদিন অমল বাবুকে বলেন-“ দেখো মেয়ে বড় হয়ে গেছে, চাষের সঙ্গে সঙ্গে আর একটা কিছু করো, মেয়ের বিয়ে দিতে হবে তো । বিয়ে দেওয়ার যা খরচ, বুঝতেই তো পারছো। তুমি সন্ধ্যেবেলায় বাজারে একটা ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে চা, চপ এসব বিক্রি করে কিছু বাড়তি রোজগার করো।”
অমল বাবু স্ত্রীর কথা মতো একটি ঠ্যালাগাড়ি কিনে প্রতিদিন সকাল থেকে কৃষিকাজ করার পর সন্ধ্যেবেলায় বাজারে চা -চপ বিক্রয় করতেন। তাতে কিছু টাকা তিনি আয় করতেন, সেই টাকা মেয়ের বিয়ের জন্য জমা রাখতেন।
অমল বাবু এভাবেই কয়েক বছর কাটালেন। সারা জীবন তিনি সংসারের জন্য বহু পরিশ্রম করেছেন। অমলবাবুর স্ত্রীর এখন শরীর ভালো যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যেই সংজ্ঞা হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অমল বাবুও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ছেলে বি এ পাশ করে বাইরের রাজ্যে একটি কোম্পানিতে কাজ করতে চলে গেছে। মেয়েরও পলিটেকনিক কলেজে পড়া শেষ। কোন কাজ না পেয়ে বাড়িতেই সে থাকে। সারাদিন মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
অমল বাবুর স্ত্রী অমলবাবুকে বললেন-” দেখো বর্তমানে দিনকাল খুব খারাপ, মেয়ের বয়স হয়েছে, এবার বিয়ে দিয়ে দেবার ব্যবস্থা করো। মেয়ের কথা শুনলে কী হবে ? ও তো বলছে আগে নিজে কিছু করি তারপর বিয়ে করব। ওর কথায় কান দিলে কবে নিজেরাই বিপদে পড়বে, তবুও মেয়েকে একবার জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন। জিজ্ঞাসা করবে, তারপর এগোবে।“
স্ত্রীর কথা মতো অমলবাবু মেয়েকে বুঝিয়ে বললেন, মেয়েও সম্মতি দিল। এরপর অমলবাবু পাত্র দেখা শুরু করে দিলেন। কয়েকটি পাত্র দেখার পর অবশেষে একজন সরকারি চাকরি করা ভালো পাত্র পেলেন, পাত্রও অমল বাবুর মেয়েকে দেখতে এসে পছন্দ করে গেলেন। অমলবাবু পাত্রের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে দিন ঠিক করে তার স্বজনদের তার বাড়িতে আসতে বলেন, মেয়ের বিয়ে পাকাপোক্তা করবেন বলে। সেইমতো সকল স্বজন এসে উপস্থিত হন অমল বাবুর বাড়িতে।
সকলে মিলে পাত্রের বাড়িতে গিয়ে দেনা-পাওনা এবং বিয়ের দিন ঠিক করে এলেন। শুরু হয়ে গেল বিয়ের প্রস্তুতি, অমল বাবু পাত্রের পিতার হাতে দেনা-পাওনার হিসেব কিছুদিনের মধ্যে মিটিয়ে দিয়ে এলেন। এদিকে মাইক, প্যান্ডেল, ব্যাণ্ডপার্টি, ডেকোরেটার, মিষ্টি, মাছ-মাংসের দোকানে অগ্রিম কিছু করে টাকা দিয়ে রাখলেন। এবং বিয়ের চিঠিও ছাপাতে দিলেন।
অমল বাবুর ছেলে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে বাড়ির কাজগুলো বাগানোর জন্য। আর মাত্র কয়েকটি দিন, তার পর মেয়ের বিয়ে। অমলবাবু আর তার স্ত্রী কয়েকদিন ধরে বাড়ির কাজগুলো সেরে ফেলেছেন।
বিয়ের চিঠি গুলো অমল বাবু এবং তার ছেলে দুজনে মিলে স্বজনদের বাড়িতে পৌঁছে দিলেন।
বিয়ের মাত্র আর দু-দিন বাকি, সমস্ত আত্মীয়-স্বজনেরা বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন। বিয়ের ঠিক আগের দিন স্বজনেরা সকলেই প্রায় উপস্থিত। বিয়ের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যে বেলা অমলবাবুর মেয়ের কয়েকজন বান্ধবী এসে মেয়েকে বাজারে নিয়ে গেল কিছু জিনিস কিনতে হবে বলে । এদিকে বাড়িতে সাজসাজ রব। আগামীকাল বিয়ে, আজের রাত কেটে ভোর হলেই বিয়ের দিন।
এদিকে ততক্ষণে ঘটে গেছে এক অভাবনীয় ঘটনা, অমলবাবুর মেয়েকে নাকি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অমলবাবু এবং তার বাড়িতে আসা স্বজনেরা এবং গ্রামের লোক চারিদিকে খুঁজতে লাগলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় অমলবাবুর মেয়েকে সে রাতে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। অবশেষে অমলবাবুর মেয়ের বান্ধবীরা বলল –‘একটি ছেলের বাইকে চেপে সে নাকি চলে গেছে, আমরা আর কিছু জানি না।‘
বিয়ের দিন সকাল বেলা অমলবাবু এবং তার স্ত্রীর মাথায় হাত, কী করবেন বুঝতে পারছেন না। স্বজনেরাও হতবাক হয়ে বসে আছেন। এমন সময় অমলবাবুর মেয়ে ফোন করে অমল বাবুকে বলে-‘বাবা আমার আর কিছু করার ছিল না, আমি একটি ছেলেকে ভালোবাসতাম, তোমাদের বলতে পারিনি। আমি পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করেছি।‘
একথা শুনে অমল বাবু মেয়ের ফোনটা কেটে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাত্রের বাড়িতে ফোন করে অমলবাবু সমস্ত ঘটনাটা জানালেন। এদিকে তখন মেয়ের এসমস্ত ঘটনা মেনে নিতে না পেরে অমলবাবুর স্ত্রী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না, শেষ পর্যন্ত অমলবাবুর স্ত্রী সেই দিনই মারা গেলেন। হাসপাতাল থেকে মরদেহ এনে দাহ করা হল। তার পর প্রায় সকল আত্মীয়রা বাড়ি ফিরে গেলেন।
অমলবাবু বড় একা হয়ে গেলেন। মেয়েও আর ফোন করেনি। কিছুদিন পার হয়ে যাওয়ার পর মেয়ে অমলবাবুকে ফোন করে তার মা কেমন আছে জিজ্ঞাসা করে। অমলবাবু লজ্জায়, অপমানে, যন্ত্রনায় দগ্ধ হয়ে উত্তরে মেয়েকে একটি কথাই বললেন-“তোর জন্য তোর মা মারা গেল, সমাজের কাছে আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না, মেয়ে বড় করে কী পাপ করেছি বল….. মা ?”
মেয়ে কোন উত্তর দিতে পারল না। বাবা-মেয়ে দু জন দু প্রান্তে ফোন ধরে নীরবে কেঁদে গেল। কেউ কারো চোখের জল মুছে দিল না।
কবিতা
রক্ত দিয়ে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ
আসবে কী তেমন কোন দিন
তুমি কী দেবে তাদের সাথ
যারা বঞ্চিত –বঞ্চিতা ঐ দেখো
ধরবে কী তুমি তাদের ঐ হাত।
কত কান্না শত যন্ত্রনা প্রকাশ্যে
উড়ছে আকাশে বাতাসে ।
ব্যথার আতর গায়ে মেখে
যারা যন্ত্রনার হাসি হাসে।
তোমার কী ধরে না মনে ও প্রাণে
তাদের জন্য একটু ভালোবাসা,
ওদের নুন আনতে পান্তা ফুরোল
তবু মনে কত নতুন স্বপ্ন আশা ।
মানুষ যদি মানুষ হয়ে পাশে থাকে
মানুষের, ভালোবাসা দেয় বিলিয়ে
আজ তোমার -কাল আমার
বাঁচাও প্রাণ শরীরের রক্ত দিয়ে।
ছুড়ছে তির
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ
কেউ তোমার ভালো করুক বা নাই করুক
খারাপ করার জন্য লোকের অভাব নেই।
তোমার সাফল্য যাদের কাছে ব্যথা দায়ক
তোমার উন্নতি হলে তাদের মনে হয়……
ও…আমার সমান হয়ে যাচ্ছে ! না.. না…
তারা কখনো আপনার মঙ্গল চাইবে না।
বারে বারে আপনাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে,
তারা চেষ্টা করবে আপনি যে কাজটা করে
এগিয়ে যাচ্ছেন, বা এগোনোর চেষ্টা করছেন
সেটাকে আটকে দিয়ে আপনাকে ধ্বংস করার।
তাই কাউকে বিশ্বাস করার পূর্বে একশো বার
ভাবার প্রয়োজন আছে…..সময় এসেছে।
প্রেম-ভালোবাসা সত্যই কী সবই সত্য এ ভুবনে ?
না কী চাওয়া পাওয়ার খেলায় মত্ত হয়ে ভালোলাগা।
আজ প্রশ্নেরা ছুড়ছে তির সকলের বুকে !
SIDDHESWAR HATUI